
বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল
-এস এম জিলানী।
কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি :-শেখ কামরুজ্জামান (রানা)।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানী বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল। এই আদর্শকে ধারণ করি, লালন করি। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল তখন একজন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার শহীদ জিয়াউর রহমান পাকিস্তানীদের এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি বলেছিলেন, `আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম পাকিস্তান সরকারের সাথে। আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে। বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো তাহলে কোর্ট মার্শালে জিয়াউর রহমানের ফাঁসি হতো এই বিদ্রোহ ঘোষণার কারনে। নিশ্চিত ফাঁসি জেনেও তিনি দেশ মাতৃকার জন্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কাজী মন্টু কলেজ মাঠে আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এসএম জিলানী বলেন, ইতিহাস থেকে জেনেছি, যখন কোন দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় তখন সেই দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের নেতা সে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে থাকেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের। কোন রাজনৈতিক দলের নেতা সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নাই। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সেদিন দিকবেদিক নেতৃত্ব শূণ্যতায় ছিল। জিয়াউর রহমান অপেক্ষায় ছিলেন হয়তো স্বাধীনতার ঘোষণা কেউ দিবে। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের নেতা যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না। জিয়াউর রহমান উপলব্ধী করলেন যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দেই তাহলে বাংলাদেশর মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে ন। আর যদি বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ না হয় তাহলে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হতে পারব না। সেই জন্য জিয়াউর রহমান চলে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে। সেখান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ওনার সহকর্মীরা বললেন স্যার মনে হয় একটু ভুল হয়ে গেছে, আপনি একজন সেনা অফিসার, আপনি স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন তাতে হয়তো বাংলাদেশের সকল মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে নাও পড়তে পারে। যদি একজন রাজনৈতিক নেতার পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তাহলে শতভাগ নিশ্চিত বাংলাদেশের সমস্ত শ্রেণিপেশার মানুষ এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। জিয়াউর রহমান আবারও ছুটে গেলেন সেই মুজিবুর রহমান সাহেবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা করলেন। এটাইতো জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ধারণ করি, লালন করি এটা কোন অপরাধ হতে পারেনা।
এস এম জিলানী নিজেরদ রাজনৈতিক দর্শণ নিয়ে বলেন,

একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে আমি একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। ১৭ বছর বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, বাংলাদেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য, হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার নেতৃত্বে রাজপথে ছিলাম। ২০০৮ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলাম। আমি আমার দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলাম। কারো বিপক্ষে নির্বাচন করি নাই। আমি তো মানুসের কল্যানের জন্য রাজনীতি করি। উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করি। আমি কার সাথে ইলেকশন করছি সেটা তো বড় কথা না। আমি একটি দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। এটাতো আমার অপরাধ হতে পারেনা। কিন্তু অপরাধ হয়েছিল। এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে আমি ১৭ বছর ১৬৭ টি মিথ্যা মামলার স্বীকার হয়েছিলাম। বছরের পর বছর আমাকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। ২০১৮ সালে যখন নির্বাচন করি আমাকে কারাগারে রাখা হয়েছিল। আমি যদি মুক্ত থাকতাম, আমি যদি ভোট করতাম তাহলে হয়তো কিছু মানুষের সাথে পরিচিত হতাম। কিন্তু ২০১৮ সালে আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো। আমি আর নির্বাচন স্বশরীরে করতে পারলাম না। আমাকে মাসের পর মাস রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতন করা হলো। আমাকে কখনো দুই হাত উপরের দিকে নিয়ে কখনো পা উপরের দিকে নিয়ে সারারাত নির্যাতন করা হতো। এই ত্যাগ স্বীকার করেছিলাম। একদিন হয়তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে না। তখন আমার গোপালগঞ্জের মানুষ, কোটালীপাড়ার মানুষ টুঙ্গিপাড়ার মানুষ যাতে অবহেলিত না থাকে সেজন্য আমি হয়তো তাদের পাশে থাকতে পারবো। সহযোগিতা করতে পারবো। সেই ধারণা থেকেই আমি রাজনীতি করেছিলাম। আপনাদের বিপদে ফেলে চলে যাবো না। পালিয়ে যাবো না। কথা দিয়ে গেলাম। একটি বারের মতো সুযোগ চাই। কথায় নয় কাজে প্রমাণ করতে চাই। এই এলাকার সকল মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ করব।
সমাবেশে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী আবুল খায়ের।
অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশার হাওলাদার, পৌর বিএনপিরি সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান হাওলাদার, মুক্তিযোদ্ধা মোদাচ্ছের ঠাকুরসহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।